new-password-2ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের সুপরিচিত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নবেন্দু গুহ-র কাছ থেকে সাতসকালে তাঁর ফেসবুক বন্ধুদের কাছে পৌঁছিয়েছিল একটা অশ্লীল ভিডিও-র লিঙ্ক। যাঁরা মি. গুহকে চেনেন-জানেন, তাঁরা সবাই অবাক – এ কী কান্ড!

বুঝতে অবশ্য কারোরই বেশী সময় লাগে নি যে হ্যাকারদের পাল্লায় পড়েছেন তিনি। তবুও বহু বন্ধুকে ফোন করে বা মেসেজ পাঠিয়ে ওই লিঙ্ক খুলতে বারণ করে দিয়েছিলেন মি. গুহ।
এরকম লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়েছেন বহু মানুষ।

তেমনি, এমন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বোধহয় খুব কমই আছেন যারা অন্তত একবারের জন্যও পাসওয়ার্ড ভুলে যান নি। এক হিসেব মতে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের গড়ে ২৬টি করে বিভিন্ন পরিষেবার পাসওয়ার্ড মনে রাখতে হয়। তাই ভুলে যাওয়াই স্বাভাবিক।

তবে, হ্যাকারদের পাল্লায় পড়া হোক বা পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়া – এগুলোর হাত থেকে এবার বোধহয় কিছুটা স্বস্তি পাবেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা।

খড়্গপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনলজির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের বিজ্ঞানীরা এক নতুন ধরনের পাসওয়ার্ড তৈরীর পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন সম্প্রতি, নাম দেওয়া হয়েছে ‘অ্যাক্টিভপাস’।

“এই পদ্ধতিতে কোনও একটি নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ড থাকবে না। প্রতিবার লগ-ইন করার সময়ে তৈরী হবে নতুন নতুন পাসওয়ার্ড। আর তার জন্য সফটওয়্যারটি তথ্য সংগ্রহ করবে ব্যবহারকারীর ফোন থেকেই,” বলছিলেন যে বিজ্ঞানী-দলটি তৈরী করেছে ‘অ্যাক্টিভপাস’, সেটির প্রধান অধ্যাপক নিলয় গাঙ্গুলি।

তাঁর কথায়, “পাসওয়ার্ডের মূল উদ্দেশ্য হল সঠিক ব্যক্তিকে চিনে নেওয়া। আমি-ই সেই ব্যক্তি কি না, তা জানতে আমাদের মোবাইল ফোনই সেরা উপায়, কারনআমরা সারাদিনে মোবাইলে যা যা করি, তা আমি ছাড়া অন্য কেউ জানে না। তাই ফোনে আমি কী কী করেছি, তার থেকেই তথ্য সংগ্রহ করে কয়েকটি প্রশ্ন করবে ‘অ্যাক্টিভপাস’।“

যেমন আগের রাতে শেষ ফোনটি আপনার কোন বন্ধু করেছিলেন, অথবা কাল কোন জনপ্রিয় শিল্পীর গান আপনি ডাউনলোড করেছিলেন – এধরনেরই তিনটি প্রশ্ন করবে সফটওয়্যারটি।
প্রশ্নগুলো এমন ভাবে করা হবে, যে কাজগুলো শুধু ব্যবহারকারী-ই মনে রাখতে পারবেন, অন্যদের জানার কথা নয়।

new-passwordদুটো সঠিক উত্তর দিতে পারলেই আপনি পাস – অর্থাৎ আপনার জন্য একটা পাসওয়ার্ড তৈরী করে দেবে সেটি। উত্তর মনে না পড়লে সঠিক জবাবের আভাসও দিয়ে দেবে এই সফটওয়্যার।

আই আই টি খড়্গপুরের কমপ্লেক্স নেটওয়ার্ক রিসার্চ গ্রুপের প্রধান মি. গাঙ্গুলির কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ফোনে কী করা হচ্ছে, কার সঙ্গে কখন কথা বলা হচ্ছে – এটা তো ব্যক্তিগত, গোপনীয় বিষয়। সফট্ওয়্যারটি এই তথ্য জেনে নেওয়ার ফলে সেই গোপনীয়তার সঙ্গে আপস করা হবে না?

“গোপনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে ঠিকই, কিন্তু যেহেতু সফটওয়্যারটা ক্লাউড-বেস্ড নয়, অর্থাৎ সেই তথ্য কোনও সার্ভারে জমা হচ্ছে না, ব্যবহারকারীর ফোনেই থাকছে, তাই গোপনীয়তার সঙ্গে আপস করার কোনও সম্ভাবনা নেই,” বলছিলেন মি. গাঙ্গুলি।

৭০ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ‘অ্যাক্টিভপাস’ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করেছেন। যার মধ্যে ৯৫{9e8f27b055b09c95183b284e44ebdf80831bce2813fced9452cd958e7132613c} সঠিক উত্তর দিয়ে পাসওয়ার্ড পেয়েছেন।

কিন্তু এখনই ব্যাঙ্ক বা অন্যান্য আর্থিক লেনদেনের জন্য ‘অ্যাক্টিভপাস’ ব্যবহার করা হবে না, শুধু সোশ্যাল মিডিয়া বা সিনেমা ডাউনলোড করার ওয়েবসাইট প্রভৃতির জন্যই শুরু করা যেতে পারে। বেশ কিছু সংস্থার সঙ্গে এ ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে বলে জানান মি. গাঙ্গুলি।
সুত্রঃ বিবিসি